Technology Dunia....

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি? কিভাবে শুরু করবেন?

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যদিও আমাদের দেশে এখনও এ বিষয়টি অনেকটা নতুন, কিন্তু এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিং এ গড়ে নিতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের একটা বিশাল বাজার। উন্নত দেশগুলো কাজের মূল্য কমানোর জন্য আউটসোর্সিং করে থাকে। বাংলাদেশসহ আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান এবং ফিলিফাইন সেই সুযোগটিকে খুবই কাজে লাগাচ্ছে। আমরা যদি ফ্রিল্যান্সিং এর বিশাল বাজার ভালমত কাজে লাগাতে পারি তাহলে এটি হতে পারে আমাদের অর্থনীতি মজবুত করার শক্ত হাতিয়ার।
freelancing and outsourcing

আউটসোর্সিং:

প্রথমেই দেখে নেয়া যাক আউটসোর্সিং এবং অফশোর আউটসোর্সিং (Offshore Outsourcing) কি এবং কেন করা হয়। আউটসোর্সিং হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজেরা না করে তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেয়া। এই কাজ হতে পারে পণ্যের শুধু ডিজাইন করা অথবা সম্পূর্ণ উৎপাদন অন্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে করিয়ে নেয়া। আউটসোর্সিং এর সিদ্ধান্ত সাধারণত নেয়া হয় উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য। অনেক সময় পর্যাপ্ত সময়, শ্রম অথবা প্রযুক্তির অভাবেও আউটসোর্সিং করা হয়। অন্যদিকে অফশোর আউটসোর্সিং হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজ দেশে সম্পন্ন না করে ভিন্ন দেশ থেকে করিয়ে আনা। প্রধানত ইউরোপ এবং আমেরিকার ধনী দেশগুলো অফশোর আউটসোর্সিং করে থাকে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে কম পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কাজগুলো (যেমন – ডাটা প্রসেসিং, এসইও, ইন্টারনেট ভিত্তিক মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স, মাল্টিমিডিয়া, টেকনিকাল সাপোর্ট, ওয়েব ইত্যাদি) অফশোর আউটসোর্সিং করা হয়। যেসকল দেশ এই ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারত, ইউক্রেইন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপিনস, রাশিয়া, পাকিস্থান, পানামা, নেপাল, বাংলাদেশ, রোমানিয়া, মালয়শিয়া, মিশর এবং আরো অনেক দেশ।
ফ্রিল্যান্সিং:
এবার দেখে নেয়া যাক, ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কি এবং কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) হওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সার হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি ছাড়া কাজ করেন। একজন ফ্রিল্যান্সারের যেরকম রয়েছে কাজের ধরণ নির্ধারণের স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা। গতানুগতিক ৯টা-৫টা অফিস সময়ের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার স্বীমাবদ্ধ নয়। ইন্টারনেটের কল্যাণে ফ্রিল্যান্সিং এখন একটি নির্দিষ্ট স্থানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত নয়। আপনার সাথে যদি থাকে একটি কম্পিউটার আর একটি ইন্টারনেট সংযোগ তাহলে যেকোন জায়গাতে বসেই আপনি ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এর কাজগুলো করতে পারেন। হতে পারে তা ওয়েবসাইট তৈরি, থ্রিডি এনিমেশন, ছবি সম্পাদনা, ডাটা এন্ট্রি বা কেমবলমাত্র লেখালেখি করা।
কাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন সহজ, যদি আপনি হোন –
• একজন স্মার্ট।
• সমসাময়িক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত, বিশেষ করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ধরনের সাইট ও সার্ভিস সম্পর্কে ভাল ধারনা।
• কোন বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী, তা হতে পারে – প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েসাইট মেইন্টেন্যান্স, ওয়েবসাইট প্রোমোশন, এসইও, ফটোশপ, গিম্প, ফ্লাশ, 2D এনিমেশন, 3D এনিমেশন, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদি আরো অসংখ্য বিষয়।
• ইংরেজি পড়তে এবং লিখতে মোটামুটি দক্ষ।
• নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত, কারণ প্রায় সময় দেখবেন বায়ার এমন একটা কাজের কথা বলেছে যা আপনি আগে কখনও শোনেননি। সেই ধরনের কাজের সমাধান সার্চ করে বের করা এবং অল্প সময়ে তাতে দক্ষতা আর্জন খুবই জরুরী।
উপরের যেকোন একটিতে যদি আপনার দূর্বলতা থেকে থাকে তাহলে আমি বলব আপনার ফ্রিল্যান্সার হওয়ার এখনও সময় হয়নি। প্রথমে সময় নিন, নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং তারপর ঝাপিয়ে পড়ুন।
সুতরা্ং বুঝতেই পেরেছেন কি ধরনের কাজ করবেন বা কি ধরনের সার্ভিস দিবেন তা আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে। যেহেতু গ্লোবাল মার্কেট, গ্লোবালি কম্পিটিশন করে এক্সপার্টদের মধ্য থেকে বিড উইন হয়ে কাজ নিতে হবে এবং মান সম্মত সার্ভিস দিতে হবে সেহেতু আপনাকে সুনির্দিষ্ঠ বিষয় বা সাব্জেক্টের উপরে খুব ভাল স্কীলড্ হতে হবে।পাশাপাশি ইংলিশ কমিউনিকেশন ত লাগবেই।
অতএব, আমি মনে করি ফ্রিল্যান্সিং / আউটসোর্সিং হচ্ছে এমন একটি পেশা যেটা করার জন্য অনেক বেশি কোয়ালিফাইড হতে হয়, ধৈর্য্য, সিরিয়াসনেস, নিজ উদ্যোগে কাজ করার মনমানসিকতা, অনেক বেশি জানার ও শিখার প্রতি আগ্রহ ইত্যাদি গুণাবলী থাকতে হয়।
এখানে বিভন্ন ধরনের জব ক্যাটাগরি আছে যেমন-
Web Design / Web Development / Software Development / Networking & Information Systems / Customer Service / Business Services / Design & Multimedia / Sales & Marketing / Writing & Translation / Administrative Support ইত্যাদি
সুতরাং কোন একটি ক্যাটাগরিতে ভালমত দক্ষ হয়ে তারপর বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের উপর আইডিয়া নেন। প্রোফাইল সাজিয়ে নিয়মিত বিড করা শুরু করে দিতে পারেন।
একটা কথা না বললেই নয়, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে ইনভলভ হওয়ার জন্য খুব বেশি সময় লাগে তা না, কোন একটা বিষয়ে স্কীলড হলে, ইংলিশ কমিউনিকেশন ও মুটামুটি থাকলে মার্কেটপ্লেস গুলোতে নিয়মিত চেষ্ঠা চালিয়ে গেলে মুটামুটি কাজ পাওয়া যায়। কথা হচ্ছে টার্গেট পূর্ণ করতে / ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে বা লাখ টাকা ইনকাম করার পর্যায়ে আসতে সময় লেগে যায়, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে স্কীল লেভেলের উপর। এই মাসে কোর্স করলাম আর তার পরের মাস থেকে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করব এইটা কখনোই সম্ভব না।
অনেকেরেই ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং নিয়ে তেমন ধারনা না থাকাতে আমার অফিসে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় প্রায়ই। বীকন আইটি’তে আমি যেটা করি,
১। কেউ জানতে আসলে তাকে আগে এই বিষয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্ঠা করি।
২। তারপর তাকেই নির্ধারণ করতে বলি সে কোন বিষয়ের উপর স্কীলড হবে।
৩। স্কীলড ডেভেলপমেন্টের কোর্স সম্পন্ন করার পর বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটের উপর প্রশিক্ষণ দিই।
৪। তারপর তারা প্রোফাইল সাজানোর পর নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যায়।
৫। আমি টার্গেট দিয়ে দিই যে যদি কোর্সের মেয়াদ ৪ মাস হয় তাহলে পরবর্তি ১ মাস থাকবে মার্কেটে দুই একটা জব নিয়ে ইনভলভ হওয়ার জন্য। এর মধ্যে কেউ কোর্স চলাকালীন সময়ে জব পেয়ে যায় আবার কেউ ১ মাসের মধ্যেই পেয়ে যায় আবার কেউ আরো পরে। এইটা নির্ভর করে তাদের প্রচেষ্ঠা, সিরিয়াসনেস, কমিউনিকেশন ও ধর্যৈর উপর।
৬। কিন্তু নতুন হিসেবে প্রথম দিকে অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তারা কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করে অভিজ্ঞতা না আসা পর্যন্ত আমার সাথে যোগাযোগ রাখে । আমি চেষ্ঠা করি যতটুকু জানি তা শেয়ার করার জন্যে।
সুতরাং আনুমানিক দুই থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে কোন একটি বিষয়ের উপর স্কীলড ডেভেলপ করে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেয়া যায় কিন্তু টার্গেট পূর্ন করার জন্য সময় লেগে যায়। ভাগ্য ভাল থাকলে ত প্রথমেই ছক্কা।
Share:

Search

Blog Archive